Love Never Ended
ইলোরা জাহান ঊর্মি ( Part – 17 )
আভা: মে আই কামিং স্যার?
রাইফ নিজের চেয়ারে বসে মনোযোগ দিয়ে একটা ফাইল ঘাঁটছিলো। আভার কন্ঠ শুনে দরজার দিকে ফিরে তাকালো। তারপর দৃষ্টি নামিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
রাইফ: কাম।
আভা ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে অপরাধীর মতো তাকিয়ে বলল,
আভা: সরি স্যার। লেট হয়ে গেল।
রাইফ: হাতের ব্যথা কেমন হয়েছে?
আভা: অনেকটা ভালো।
রাইফ: মেডিসিন খেয়েছেন?
আভা: হ্যাঁ।
আভা খেয়াল করলো রাইফ ফাইলে মুখ গুঁজে তার সাথে কথা বলছে। একবারও তার দিকে তাকাচ্ছে না। তাছাড়া গতকাল রাতেও রাইফ তাকে তুমি বলে সম্বোধন করছিল। অথচ সকাল হতেই তুমিটা আবার আপনিতে চলে গেল কীভাবে! গতকাল তো কতো করুণ কন্ঠে কথা বলছিল। আর এখন আবার সেই আগের মতো গম্ভীর মনে হচ্ছে। আভা একটু বেশিই অবাক হলো।
Emotional Sad Love Story
রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে সে রাইফের দিকে তাকিয়ে আছে আর বুঝার চেষ্টা করছে তাকে। রাইফ ফাইল থেকে হঠাৎ মুখ উঠিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আভার মুখোভাব লক্ষ্য করে বলে উঠলো,
রাইফ: হোয়াট?
আভা থতমত খেয়ে গেল। দ্রুত দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে আমতা আমতা করে মাথা নেড়ে বলল,
আভা: নাথিং।
রাইফ: এভাবে তাকিয়ে ছিলেন কেন?
আভা এবার চুপসে গেল। বলার মতো কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না বিধায় চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। রাইফ আভার মুখের অবস্থা দেখে ঠোঁট টিপে নিঃশব্দে হাসলো। রাইফ একটু নড়েচড়ে বসে গলা ঝেড়ে আঙুলের ফাঁকে কলম ঘুরাতে ঘুরাতে বলল,
রাইফ: তো মিসেস….ওপস সরি,মিসটেক হয়ে গেছে। কিছু মনে করবেন না।
রাইফের কথা বলার ধরণ দেখে আভা ঠিকই বুঝতে পারছে রাইফ ইচ্ছে করেই এভাবে কথা বলছে। আভার গা জ্বলে যাচ্ছে রাইফের ইচ্ছাকৃত ভুল করে সরি বলার ভঙ্গিমা দেখে। রাইফ আবার বলে উঠলো,
রাইফ: মিস আভা, যদিও আপনি আধা ঘন্টা লেট করে এসেছেন। তবু আপনি অসুস্থ বলে মাফ করে দিলাম। তাই চুপচাপ লক্ষ্মী মেয়ের মতো আপনার কাজ শুরু করুন।
Heart Touching Love Story
আভা মাথাটা হালকা ঝাঁকিয়ে টেবিলের পাশে পড়ে থাকা আনসলভ ফাইলগুলো হাতে নিতেই রাইফ ভ্রূকুটি করে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
রাইফ: কী করছেন আপনি?
আভা: এই ফাইলগুলো সলভ করা হয় নি এখনো তাই………
আভার কথা শেষ করতে না দিয়েই রাইফ বাঁকা হেসে বলল,
রাইফ: আপনাকে যে পুরো অফিস ঘুরে সবার কাজ দেখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সেটা কী আপনি ভুলে গেছেন?
……………………
মুহুর্তেই আভার চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি এসে ভর করলো। রাইফ যে তাকে খাটানোর ধান্দায় ইচ্ছাকৃত এই আজাইরা কাজের ভার দিয়েছিল তা সে ভুলে বসে ছিল। প্রথম দিন পুরো অফিস চক্কর দিয়ে তার কী অবস্থাটাই না হয়েছিল মনে পড়তেই আভার মুখটা শুকিয়ে চুপসে গেল। কাঁদো কাঁদো মুখ করে সে রাইফের দিকে তাকালো।
আভার মুখ দেখে রাইফ বেশ মজা পাচ্ছে। তাই ল্যাপটপটা খুলতে খুলতে আবার গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
রাইফ: এভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বুঝাই যাচ্ছে নিজের দায়িত্বের কথা ভুলে বসে আছেন। এখন তো আমি মনে করিয়ে দিয়েছি। নাউ গো।
আভার ইচ্ছে করছে রাইফের মাথাটা দেয়ালের সাথে ঠুকে দিতে। এক রাতের মধ্যে রাইফ আবার কীভাবে পাল্টে গেল ভেবেই পাচ্ছে না সে। মনে মনে রাইফের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে আভা গাল ফুলিয়ে দ্রুত পায়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। আভা বেরিয়ে যেতেই রাইফ কেবিন কাঁপিয়ে হা হা করে হেসে উঠলো।
Valobashar Golpo
রাইফের হাসির মাঝেই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো আসিফ। কেবিনে ঢুকেই রাইফকে আপন মনে এভাবে হাসতে দেখে সে যেন আকাশ থেকে পড়লো। রাইফকে সে লাস্ট কবে এভাবে মন খুলে হাসতে দেখেছে তা তার নিজেরই মনেই নেই। একদিকে খুশি খুশিও লাগছে আবার অন্যদিকে অবাকও লাগছে। আসিফ ভ্রূ কুঁচকে রাইফের সামনে তুড়ি বাজিয়ে অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
আসিফ: হোয়াট? এভাবে পাগলের মতো হাসছিস কেন?
রাইফ আসিফের কথায় কোনোমতে হাসি থামিয়ে তাকে বসতে ইশারা করলো। আসিফ সামনের চেয়ার টেনে বসে গা এলিয়ে দিয়ে বলল,
আসিফ: সূর্য কোন দিকে উদয় হলো বল তো? এতো দিন পর আজ হঠাৎ আপন মনে হা হা করে হাসছিস! হোয়াট হ্যাপেন্ড ব্রো?
রাইফ হাসি থামিয়ে উত্তর দিলো,
রাইফ: তোর প্ল্যানটা কাজে লেগেছে ব্রো। আভার মুখটা দেখার মতো ছিল। না জানি পুরো প্ল্যান কমপ্লিট হওয়ার আগে ওর মুখের কী অবস্থাটাই না হয়। বলেই রাইফ আবার হেসে উঠলো। আসিফ মুচকি হেসে ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
আসিফ: যাক,তাহলে অবশেষে আমার গোমড়া মুখো ফ্রেন্ড আভার কারণে প্রাণ খুলে হাসলো। হাসিটা যার কারণে উধাও হয়েছিল আবার তার কারণেই ফিরে এসেছে এটাই অনেক বেশি। আপু জানলে শুকরিয়া আদায় করবে।
আসিফের কথায় রাইফ ঠোঁটে মৃদু হাসির রেখা ঝুলিয়ে বলল,
রাইফ: তারপর? তোর কাজ কতোদূর?
আসিফ: টোটালি কমপ্লিট। জোহানের কয়েকজন লোককে টাকা দিয়ে হাত করে নিয়েছি। ওরা সব আপডেট দিচ্ছে আমাকে। আজ রাত দশটায় ওর দুই ট্রাক ড্রাগ দেশের বাইরে পাচার করার জন্য রওনা হবে। রওনা দেয়ার আগে জোহান নিজে সেখানে উপস্থিত থাকবে। তখনই সব প্রমাণসহ হাতেনাতে ধরতে হবে ওকে।
Also, Read Those Love Story
এতো দিন পুলিশকে ঘুষ খাইয়ে সবকিছু ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু এবার প্রেস মিডিয়ার সামনে সব প্রমাণ করা হবে। কাল সকালে নিউজের হেডলাইন হবে মি. জোহান চৌধুরীর গোপন সত্যের মুখোশ উন্মোচন।
বলেই আসিফ বাঁকা হাসলো। রাইফও বাঁকা হেসে বলল,
রাইফ: ওয়েল ডান মি. আসিফ আরিয়ান। এবার তাহলে ফোনটা করা যাক?
আসিফ: সিওর।
রাইফ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। পকেট থেকে ফোন বের করে গলা ঝেড়ে নিলো। আসিফও নিজের চেয়ার ছেড়ে রাইফের সামনে এসে দাঁড়ালো। রাইফ একটা নাম্বারে ডায়াল করলো। কয়েকবার রিং হওয়ার পরেই ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হলো। রাইফ ফোনটা লাউড স্পিকারে দিয়ে কল রেকর্ডিং অন করে দিলো। ওপাশ থেকে উৎফুল্ল কন্ঠ শোনা গেল।
জোহান: হ্যালো মি. রাইফ ইয়াসার। কী ব্যাপার? হঠাৎ নিজে থেকেই ফোন করেছেন এই অধমকে!
রাইফ বাঁকা হেসে বলল,
রাইফ: আরে মি. জোহান চৌধুরী। আপনি এতো প্রশংসনীয় একটা কাজ করেছেন আর আমি আপনাকে বাহবা দেবো না এটা কী করে হয় বলুন?
জোহান: ওহ,তাহলে সবকিছু জেনে গেছিস?
জোহান দাঁতে দাঁত পিষে কথাটা বলতেই রাইফ একই ভাবে বলল,
রাইফ: তুই ছাড়া আমার সাথে এমন কাজ আর কেউ করতে পারে না। বাট আফসোস! তুই তোর কাজে সফল হতে পারলি না। পোষা গুন্ডা দিয়ে আমাকে মারতে চেয়েছিলি ঠিকই কিন্তু এখনো আমি সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় তোর সাথে কথা বলছি।
{ Love Story In Bangla }
জোহান: এবার তো তোর ওই সুন্দরী পিএর জন্য বেঁচে গেলি। পরের-বার আর তোর বাঁচার কোনো ওয়ে থাকবে না। তোর মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে। ওহ তুই তো মরেই যাবি তার আগে আমার প্ল্যানটা শোন। তোকে মেরে আমি তোর ওই সুন্দরী অহংকারী পিএ কে তুলে এনে ওর সব অহংকার মাটিতে মিশিয়ে দেবো। শুনলাম তোর ওই পিএ নাকি আবার তোর এক্স। কথাটা শুনে আরো বেশি এক্সাইটেড লাগছে। পরের বার আর কোনো ভুল হবে না। জাস্ট ওয়েট।
জোহানের কথায় রাইফের মুখের কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। সে একই ভাবে বাঁকা হাসি টেনে বলল,
রাইফ: পরের সুযোগটা তুই পেলে তো করবি। যাই হোক চেষ্টা চালিয়ে যা। অল দ্যা বেস্ট। টেক কেয়ার।
রাইফ ফোনটা কেটে দিলো। আসিফ মুচকি হেসে বলল,
আসিফ: সব কাজ হয়ে গেছে। রেকর্ডিংটা সেন্ড কর আমাকে।
রাইফ দেরি না করে আসিফের ফোনে রেকর্ডিংটা সেন্ড করে দিলো।
আসিফ: আমি আসছি। শোন,সন্ধ্যার আগে বের হবি। আর বের হয়েই আমাকে কল করবি।
রাইফ: ওকে। টেক কেয়ার।
Also Visit Those Love Story Article
আসিফ মাথা ঝাঁকিয়ে দ্রুত পায়ে প্রস্থান করলো। রাইফ কিছুক্ষণ আপন মনে কিছু একটা ভেবে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। টানা আধঘণ্টা পর আভা ধীর পায়ে রাইফের কেবিনের সামনে দাঁড়ালো। রাইফ তাকে খেয়াল করেই ভেতরে আসতে বলল।
আভাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আভা কিছু না বলেই ধপ করে পাশের চেয়ারটাতে বসে কপালে দুহাত রেখে মাথা নিচু করে বসলো। রাইফ আভাকে লক্ষ্য করে গ্লাস ভর্তি পানি এগিয়ে ধরলো। আভা বিনা বাক্যে রাইফের হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে সবটুকু পানি খেয়ে ফেললো। রাইফ শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
রাইফ: ঠিক আছো?
উত্তরে আভা শুধু মাথা ঝাঁকালো যার অর্থ সে ঠিক আছে। রাইফ কিছু বলতে যাবে তার আগেই আভা কোমল কন্ঠে বলল,
আভা: আম্মু ফোন করেছিল। বলেছে এক্ষুনি বাসায় যেতে।
রাইফ: এক্ষুনি!
আভা: হুম।
রাইফ: কেন?
আভা: জানি না। বলল জরুরি কাজ আছে। কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ দেয় নি।
রাইফ ভ্রূকুটি করে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বলল,
রাইফ: ঠিক আছে। সামিদ কে সাথে নিয়ে……..
আভা: সামিদ তো চলে গেছে। আপনার কাছ থেকে ছুটি নিয়েই তো গেল।
রাইফ কিছু একটা মনে পড়েছে এমন মুখোভাব করে বলল,
রাইফ: ওহ্ ভুলে গিয়েছিলাম। সামিদের নাকি ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে তাই আজকের জন্য ছুটি নিয়েছে। ঠিক আছে, চলো আমি পৌঁছে দিচ্ছি।
বলতে বলতে রাইফ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আভা হুট করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
আভা: না না স্যার। তার দরকার হবে না। আমি একাই চলে যেতে পারবো।
রাইফ: বেশি পাকামো করো না। যা বলছি তাই করো। চলো।
শক্ত গলায় কথাটা বলেই রাইফ কেবিনের বাইরে হাঁটা দিলো। গম্ভীর মুখে যেভাবে কথা বলছে,যেকোনো সময় ধমকে উঠবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আভা আর কী করবে? কোনো কথা বলার সুযোগ না পেয়ে বাধ্য মেয়ের মতো রাইফের পিছু নিলো।
Click Here For Next Part —–চলবে…
Join Our { FB PAGE } and { FB GROUP } For Every Single Minutes Update Of { Golper Jogot- Largest Story Platform }. Also Please Share Our Story On Your Social Media Platform and with Your Friends.