Golperjogot

Golperjogot

বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব ৪৩ রোমান্টিক গল্প | মোনা হোসাইন

বেপরোয়া ভালবাসা
লিখনীঃ মনা হোসাইন
পর্বঃ ৪৩

রাত ১ টা বেজে ৪০ মিনিট আদিবার সাথে ঝগড়া করতে করতে কখন যে ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে গিয়েছে আদি বুঝতেই পারে নি. তবে এখন আর চোখে খোলে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। গতরাতে সে একটুও ঘুমাতে পারেনি। জার্নি করে এসেছে তারউপড় আদিবার চিন্তা তো ছিলই। আদিবা এখনো বক বক করে চলেছে আদি এবার বাধ্য হয়েই বলল,

-“আচ্ছা ঠিক আছে আপনারি জয় হয়েছে। বিড়াল আপনিই মেরেছেন এখন আমরা একটু ঘুমাই..?

আদিবা সোজা উত্তর দিল,
-“আমার ঘুম পায়নি..

-‘তা পাবে কেন প্লেনে সারাক্ষন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এসেছেন বাসায় এসেও ঘুমিয়েছেন আপনার তো ঘুম পাওয়ার কথা না।

-“আপনার সাথে বিয়ে হয়েছে বলে কী ঘুমাতেও মানা..?

-“জ্বি না আপনার যা খুশি করতে পারেন।

-“বেশ তাহলে আমার এখন গল্প করতে ইচ্ছে করছে চলুন গল্প করি।

-“মানে কী..?

-“আপনিই তো বললেন যা খুশি করা যাবে।

-“আদিবার বাচ্চা এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস। চুপচাপ ঘুমা তানাহলে কানের নিচে এমন মা*রব কেঁদে কূল পাবিনা।

-“কী সর্বনাশ বাসর রাতেই নারী নি*র্যাতন?

-“আদিবা আমাকে একটু ঘুমাতে দে প্লিজ। কাল অফিসে জরুরি মিটিং আছে।

-“আমি কী বাঁধা দিয়েছি নাকি..? ঘুমান যতখুশি ঘুমান।

বলেই আদিবা বিছানা ছেড়ে উঠে গেল। আর কিছু না বলে দরজার দিকে হাঁটা দিল।আদিবার কান্ডে আদি অবাকের উপড় অবাক হচ্ছে।দরজা পর্যন্ত যেতেই আদি বলল,

-“আজব তো ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস?

-“বাইরে…

-“এত রাতে বাইরে কোন দুঃখে..?

-“দুখে যাব কেন সুখে যাচ্ছি। আমার একমাত্র জামাই একদিনেই আমার উপড় সব ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলেছে সেই সুখে বাইরে একা একা হাঁটতে যাচ্ছি।

-“এসব কোন ধরনের কতাবার্থা? আমি কখন বললাম ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলছি?

-“সব কি মুখে বলতে হয়? আপনি ঘুমান আমি বাইরে যাচ্ছি।

-“ওই দাঁড়া..

আদিবা দাঁড়াল না আদি নিচে নেমে এগুতে এগুতে বলল,

-“তো এখন আমি ঠিক কী কী করলে প্রমাণ হবে বউয়ের প্রতি আমার ইন্টারেস্ট আছে..? একটু আগে যা যা করেছিলাম সেগুলো রিপিট করব?

আদিবা মুখ ভেঙছি কেটে জবাব দিল,

-” একটু আগে যা যা করেছেন,এসব সব ছেলেরাই করতে চায় কার সাথে করছে ব্যাপার না এসব করতে পারলেই হল। ছেলে হয়ে যখন জন্ম নিয়েছেন যখন আপনারো এসব কিছুতে ইন্টারেস্ট থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাইবলে এ থেকে প্রমান হয় না যে আপনার বউয়ের জন্য টান আছে।

আদি চোখ বন্ধ করে নিজেকে রাগ সংযত করার চেষ্টা করে বলল,

-“আচ্ছা তাহলে বল কি করলে প্রমাণ হবে টান আছে?

-“বাইরে চলুন আর আমার সাথে গল্প করুন।

-“খোদা আমাকে ধর্য্য দাও।

আদিবা কিছু না বলেই বাইরে চলে গেল আদি বাধ্য হয়েই পিছু পিছু গেল। বাইরে এসে আদিবা একটা বেঞ্চে বসল আদিও তার পাশে বসেছে।

-“তো এখন বল আমার সাথে তোর কী এমন গল্প করার আছে? জীবনে কোনদিন তো ভাল করে একটা কথা বললি না আজ কী এমন গল্প বলবি বল শুনি।

-“এমন বাঁকা কথা বললে কারোর গল্প করতে ইচ্ছে করবে?যাইহোক আপনি এখানে বসুন আমি একটু ঘুরে আসি।

-“মানে কী? রাতের বেলায় কোথায় যাবি?

-“কোথাও যাব না এখানেই থাকব। আর আপনি বসে বসে আমাকে পাহারা দিবেন।

-“কোন মানে হয়..?

আদিবা আদির কথার পাত্তা না দিয়ে চলে গেল। আদি আদিবার কর্মকান্ড দেখছে আর রাগ নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছে আদিবা অন্তত কয়েকবার বাসার পুরো বাগান চক্কর দিয়ে ফেলেছে তবুও থামার নাম নেই। আদির ঘুম পেলেও সে ঘুমাতে পারছে না কারন এই মেয়ের বিশ্বাস নেই আদি চোখ বুজলেই এদিক ওদিক চলে যাবে সন্দেহ নেই।

মুটামুটি ঘন্টা খানিক পর আদি উঠে আদিবার কাছে গেল।

-“একটু পরেই ভোর হয়ে যাবে এখন ভিতরে যাই..?

-“উহু…

-“উফফ আদিবা ছোট বাচ্চাদের মত এসব কি হচ্ছে..?

-“আপনি জানেন এখন কী হবে..?

-“কী হবে..?

-“বৃষ্টি নামবে..

-“হুম আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে সেই জন্যেই বলছি চল ভিতরে যাই…

-“নাহ আজ আমরা বৃষ্টিতে ভিজব।

-“মানে..?

আদিবা হটাৎ করেই কেন যেন মন খারাপ করে ফেলল।হাস্যজ্জল মুখে মূহুর্তেই মেঘ জমেছে..সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নীরব গলায় বলল,

-“আপনি জানেন আমি কত বছর বৃষ্টিতে ভিজিনি..?

আদি উত্তর দিল না কোন কারনে তারও মন খারাপ হয়েছে…

আদিবা একটু থেমে বলল,
-“উত্তর দিলেন না? তারমানে আপনার মনে আছে? সেদিন ভিজেছিলাম জন্যে আপনি পুরো একদিন আমাকে খেতে দিন নি।

আদিও অন্যদিকে মুখ করে জবাব দিল,

-“আমি কোনকিছুই সহজে ভুলি না তাছাড়া বৃষ্টিতে ভেজা কোন যুক্তিসংগত কাজ না। কোন সুস্থ মানুষের বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছে হতে পারে বলে আমার মনে হয় না।

-“আপনার কী মনে হয় পৃথিবীর সবার পছন্দ অপছন্দ গুলো আপনার মত হবে?

-“নাহ পৃথিবীর সবাইকে আমি আমার সাথে রাখব না। তাই তাদের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে আমার ভাবার কিছু নেই কিন্তু যাকে আমার সাথে থাকতে হবে তার পছন্দ অপছন্দগুলো আমার মত হওয়া জরুরি। তাছাড়া আমি কখনো নিজের জন্য কিছু করিনি যা করেছি তোর ভালর জন্যই করেছি…

-“সত্যিই তাই..?

-“অবশ্যই তাছাড়া তুই ভুল বলেছিস তুই কদিন আগেও গ্রামে বৃষ্টিতে ভিজেছিস আমি কিছুই বলিনি।

-“এই ভেজা আর আনন্দে ভেজা কী এক? বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছেটা অনেক আগেই হারিয়ে গিয়েছে।

-“ক্ষতিকর বিষয়ে ইচ্ছে না থাকাই ভাল।

-“ওহ…

আদিবা পুরো কথা শেষ করার আগেই আকাশ কেঁপে বৃষ্টি শুরু হল তবে আদি কিংবা আদিবা কেউই ভিতরে যাওয়ার ব্যাস্ততা দেখাল না বরং আদিবা খিলখিল করে হেসে উঠল সে আদির হাত ধরে টেনে বাগানের ফাঁকা দিকটায় নিয়ে গিয়ে দাঁড়াল অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে আদি আদিবা দুজনেই ভিজে একাকার। আদিবা আদির হাত ধরে ঘুরে ঘুরে ভিজছে। প্রথম দিকে আদির বিরক্ত লাগলেও আদিবার খুশি দেখে তাকে বাঁধা দিতে ইচ্ছে করল না কিছুক্ষনের মধ্যে তারও ভাল লাগতে শুরু করেছে। হয়ত আদিবা তার সাথে ভিজছে জন্যেই ভাল লাগছে। তাই সেও বেশ অনেক্ষন ভিজল। দেখতে দেখতে সময় কেটে গেল। ভোর হতে আর কিছুক্ষন।

-“আদিবা এবার ভিতরে চল বেশি ভিজলে ঠান্ডা লাগবে..

হটাৎ করেই আদিবা আদিকে জড়িয়ে ধরল আদিবা এমন কিছু করবে আদি ভাবতেও পারেনি সে এক মিনিটের জন্যে থমকে গেল। হাত দুটো কাঁপছে,বুকের ভিতর উতাল পাতাল শুরু হয়েছে। আদি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখে আদিবা বলল,

-“হাঁটতে ইচ্ছে করছে না কোলে নিন।

আদি কোন জবাব না দিয়ে আদিবাকে কোলে নিয়ে ঘরে গেল। আদিবাকে ফ্রেশ হতে বলে নিজেও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসল।



বেচারার বেহাল দশা এতক্ষন ভিজেছে তারউপড় সারারাত না ঘুমানোর ফলে চোখ লাল হয়ে আছে। যাই হয়ে যাক এখন একটু ঘুমাতেই হবে ভেবে আদি যেই বিছানায় গাঁ ছুয়াল সাথে সাথে আদিবা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসল। আদি উদ্বেগ নিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে বলল,

-“কী হয়েছে আদিবা..?

-“কি হয়েছে মানে? আপনি শুয়ে পড়ছেন কোন বুদ্ধিতে?

-“কেন কী হয়েছে? এখন তো তোর গল্প করা শেষ হয়েছে এখন ঘুমাতে অসুবিধে কী?

-“আশ্চর্য তো সকাল হয়ে গিয়েছে দেখতে পাচ্ছেন না?

-“তো সকালে কী ঘুমানো বারণ আমার অফিস দশটায় এখনো ঘুমালে অনেক্ষন ঘুমানো যাবে। একটু না ঘুমিয়ে গেলে কাজে মন বসবে না তুই তো জানিস আংকেল অনে আশা নিয়ে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে যদি তার মান রাখতে না পারি…

-“কার না কার আশা পূরণ করতে গিয়ে নিজের বউকে না খায়িয়ে রাখবেন?

-“মানে?

-“আমি কি সকালে ব্রেকফাস্ট করব না নাকি? আপনি এখন ঘুমালে ব্রেকফাস্ট কে বানাবে..? ভালয় ভালয় এখনী নিচে গিয়ে রান্না করুন।

আদি বেশ অবাক হয়ে তাকাল আদিবার দিকে।

-“এভাবে তাকিয়ে আছেন যে? খেতে চাওয়াও অন্যায় তাই না?

-“আমি তা বলিনি। তুই তো রান্না পারিস।

-“ওহ তারমানে সকালে যা যা বলেছিলেন সব মিথ্যে ছিল? আমাকে কাজ করতে হবে না এসব মিথ্যা ছিল।

আদি উত্তর দিতে পারল না উঠে রান্না ঘরের দিকে হাঁটা দিল।



চলবে…!!